Disclaimer: গল্পটি বাস্তব জীবনের সাথে কল্পনার মিশ্রনে গঠিত। এই গল্পের সমস্ত চরিত্র ও কিছু বিশেষ প্লট সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কোনো মিল থেকে থাকলে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ও কাকতালীয়। আশা করবো পাঠকরা সম্পুর্ন গল্প পাঠের আনন্দে খোলা মনে গল্পটিকে উপভোগ করবেন। ধন্যবাদ।
— “এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় খবর হলো বাংলার রঞ্জি টীম এর এক অনন্য ক্রিকেটার(কিপার ব্যাটসম্যান) রাজীব সেন এর আজ সকালে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে ঢাকুরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে। তার ফ্ল্যাট এর বেডরুমে তার মৃতদেহ ফ্যান এর সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে বলে এখনো পর্যন্ত খবর। এটিকে নিতান্তই এক আত্মহত্যার ঘটনা বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। এই নিয়ে শহরের এই এলাকায় একমাসে যে কত কান্ড হলো তার ঠিক নেই।আর শুধু ঢাকুরিয়াই বা বলি কিকরে…….কলকাতা শহর জুড়ে এই নিয়ে পুরো তিনজন সেলেব্রেটির তথা নক্ষত্রের পতন ঘটলো এই মাসের মধ্যেই। আর সকলেরই মৃত্যুর কারণ নাকি আত্মহত্যা।
টেলিভিশন মানেই এদের নেতিবাচক খবর ছাড়া আর কোনোকিছুরই কালেকশন থাকে না বলে শ্রেয়ান এর কোনো চ্যানেলেই কিছু দেখার মন করে না। তবে তিনি যে খুব একটা সময় পান তাও না, তবে বর্তমানে এই ভাইরাসের কোপে সারা শহরটাই ঘরবন্দি বলে সবার যে সময়ের খুব একটা অভাব তা একেবারেই স্বীকারযোগ্য নয়। এই অদ্ভুত পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে এর মোকাবিলা করাটাও মানুষের কাছে এখন একটা অবিস্বাশ্যকর জটিল ধাঁধার মতো। এর থেকেও জটিলতার সম্মুখীন এখন পুলিশকর্মী ,ডাক্তার, নার্স আর প্রশাসন। এত কম দিনের ব্যবধানে তিনটি তারার পতন, তাও আবার তিনজনের ক্ষেত্রেই আত্মহত্যা, এ জিনিস বড় একটা দেখা যায় না। তবে একা রামে যে রক্ষে নেই তা আবহাওয়া দফতর থেকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘন্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে এক তুমুল ঝড়ের পূর্বাভাস এখন চারিদিকের নিস্তব্ধতা কে আরো যেন বাড়িয়ে তুলেছে। ঝড়টি ঘন্টাখানেকের মধ্যেই, অর্থাৎ রাত ৮ টা নাগাদ আছড়ে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই ঘরের বাইরে একটিও প্রাণীর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না, শুধুই শোনা যাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়ার ফিসফিসানি।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠা শ্রেয়ানের ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটায়।
— “শুভ জন্মদিন শ্রেয়ান!”
বললেন দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোকটি।
— “আরে, কি আশ্চর্য! সৌহার্দ্র যে ! কি সৌভাগ্য আমার, এদ্দিন পরে তোমার চরণের ধুলো শেষমেশ এই অধমের ঘরে পড়লো তাহলে!”
— “তুমি যদি অধম হও তাহলে তো বলতে হয় উত্তম শুধু পর্দার্থেই শ্রেয়, আর পায়ের ধুলো তখনই পড়বে যখন তুমি তোমার চৌকাঠ পেরোনোর অনুমতি দেবে!”
— “এরাম ছি ছি, অবশ্যই এসো এসো! জুতোটা ভেতরে রাখো।”
— “নাহ! বাইরে রাখাই ভালো, শুধু শুধু ঘরটা নোংরা হবে।”
বন্ধুবর এবারে ভেতরে ঢুকলেন, হাতের দস্তানা খুলে হাত স্যানিটাইজ করে আবার নতুন দস্তানা হাতে পরে নিলেন সৌহার্দ্র।
ঝোড়ো হওয়ার গতিবেগ যেন ধীরে ধীরে বাড়তেই আছে, চাপা কণ্ঠে তার শোঁ শোঁ আওয়াজ যেন ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
— “তা এরকম একটা দিনে বাড়ির বাইরে যে? কি ব্যাপার?”
— “ওই একটা এমার্জেন্সিতেই বেড়িয়েছি আরকি, ফেরার পথে তোমার বাড়ির পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম….ভাবলাম একবার না হয় ঘুরেই আসা যাক, যদিও এখন……
তোমার সমস্যার কারণ হলাম নাতো……
— “আরে না না কি যে বল বেশ করেছো এসেছো! অবশ্য আজ তো একটা বিশেষ দিন , তাছাড়া সারা সন্ধ্যে একা একা কাটানোর থেকে তো এটা ঢের ভালো! তা আগে বলো কি নেবে, চা না কফি ?”
— “না না, ওসব কিছুর কোনো প্রয়োজন ই নেই আমি জাস্ট কিছুক্ষন থাকবো, তুমি প্লিজ এতো ব্যস্ত হবেনা! অবশ্য ভাইরাস নিধন এক কঠিন কর্মযজ্ঞ বন্ধু, এক জায়গায় বেশিক্ষন থাকা বর্তমানে একেবারেই কাম্য নয়। তার ওপর আজ ওয়েদারের অবস্থা খুব ই শোচনীয়।”
শ্রেয়ানের ড্রইংরুমটাকে দেখে বেশ লাগলো সৌহার্দ্রর । ঘরটা বেশ ছিপছাপ, ঘরের মদ্দিখানে সেন্টার টেবিল সহযোগে রয়েছে একটা সোফাসেট, তার সামনেই দেয়ালে টাঙানো একটা বড়ো এল-ই-ডি টিভি, দেয়ালে নানান ছবি। অবশ্য সবকটাই যে শ্রেয়ানেরই তোলা সে বিষয়ে সন্দেহই নেই।দেয়ালে বড়ো করে শ্রেয়ানের ক্যামেরা হাতে রাখা অবস্থায় ওয়াল পেইন্টিং দেখে এইটুকু আন্দাজ করাই যায়। ভারী সুন্দর ভাবে সাজানো পুরো ঘরটা।
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবে যে শ্রেয়ানের খুব নামডাক আছে তা বলাই বাহুল্য। ২০১৭ সালে পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্তির পরে তিনি এই ব্যাপারে সেরা বাঙালির খেতাবটাও অর্জন করেছেন।
— “আচ্ছা……তুমি যখন এখানে এসেই পড়েছো, তোমাকে একটা ব্যাপারে একটু জিজ্ঞেস করি…যদি তুমি বিরক্ত না হও তবে….।”
বললেন শ্রেয়ান।
— “নিঃসন্দেহে!”
উত্তরে জানালো সৌহার্দ্র।
— “আচ্ছা রিসেন্টলি এই সুইসাইডের কেসগুলোর ব্যাপারে তোমার কি মনে হয়?”
— “ঠিক ক্লিয়ার হলো না। কোন কেস?”
— “সে কি কথা, তুমি শোনোনি? একের পর এক এতগুলো…….”
— “অফহো…., হ্যাঁ হ্যাঁ জানি! এখন তো এটাই আলোচ্য বিষয়! আসলে সময় সময় যে কি হয়….. মন যে কোথায় থাকে….তাই প্রথমে ধরতে পারিনি….. সরি…. ”
–“হা হা……”, হেসে ফেললো শ্রেয়ান। তারপরেই বলে উঠলেন।
— “আচ্ছা যাই হোক ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত নয় কি?”
হঠাৎ এমন সময় সৌহার্দ্রর একবার চোখ গেলো জানলার দিকে, বিদ্যুৎ চমকালো একবার, জানলার কাঁচটা যেন ঝলসে উঠলো যেন!
তারপরেই তিনি বললেন……..
— “হ্যাঁ ওই আরকি…! চিন্তাশীল মানুষজনেদের তো ওই অবসাদের সঙ্গেই যে সহবাস! আর সেই সহাবস্থানেই যত বিভীষণের উৎপত্তি…..মানে আরকি ওই ঘোরশত্রু। নিজেই নিজের ভিলেন। আর ঘরটা হলো দেহ।”
— “না…তা অবশ্য তুমি ঠিক ই বলেছো…..সেটা হতেই পারে, তবে ব্যাপারটা কেমন কাকতালীয় না? একই সঙ্গে পরপর তিনজন…….”
— “হাহাহাহা”
হেসে উঠলেন সৌহার্দ্র।
— “হঠাৎ হলো কি তোমার?”
জিজ্ঞেস করলেন অপ্রস্তুত শ্রেয়ান।
— “না সেরম কিছুই না…… সেই ইয়ং ইনভেস্টিগেটিভ আর জার্নালিসম এ সমৃদ্ধ শ্রেয়ান গোস্বামী কে ফিরে পেয়ে বেশ লাগছে কিন্তু….. !”
— “না, মানে ওই আরকি একটু রিসার্চ শুরু করেছি এঁদের নিয়ে!”
— “কিরকম?”
— “এঁরা তিনজনেই কোনো না কোনো বিতর্কে নিশ্চই জড়িয়েছেন!”
— “বিতর্কের প্রলেপ যদি নাই লাগে তাহলে এদের যশস্বী বলা চলে কি?”
জানলার কাছেই একটা ছায়া ক্রমাগত যেন দুলেই চলেছে, একটা গাছ ঠিক যেন এক এলোকেশী হয়ে উঠেছে।
— “না…., মানে বিতর্ক বলতে আমরা যেগুলো কাগজে পড়ি বা টিভিতে শুনি তেমনটা নয়। এগুলো যদিও পরে পাবলিকলি উঠে আসেনি সেভাবে…….”
— “বেশ তো , চালিয়ে যাও বস….!”
হঠাৎ শোনা গেলো কোনো এক বাড়ির জানলার কাঁচ ভেঙে পড়লো। মনে তো হয় বাজ পরেই এই কান্ড ঘটেছে।
— “সাংবাদিক মহলে আমার তো কিছু কিছু চেনা পরিচিত লোকজনেরা রয়েইছেন…..তাঁদের কাছ থেকেই তথ্যগুলো পাওয়া আরকি।”
— “আচ্ছা”
এবারে সৌহার্দ্র এগিয়ে গেলেন দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলোর দিকে। একবার পকেটে রাখা স্যানিটাইজারের বোতলটা হাতড়ে দেখে নিলেন।
— “প্রথমে যাঁর কথা বলবো তিনি হলেন অরণ্য শর্মা, ইনি হলেন একজন স্বনামধন্য আর্টিস্ট……উনি বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে সেখানকার শিল্প নিয়ে নানান রিসার্চ করেছেন, পড়াশুনা করেছেন, সেবিষয়ে আমরা প্রত্যেকেই প্রায় কমবেশি জানি, তবে একবার নাকি কোনো কলকাতার এক বৃদ্ধার স্কেচ দেখে ভীষণই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, পরে শর্মাবাবু কলকাতায় ফিরে এলে, বৃদ্ধা আবিষ্কার করেন তাঁর তৈরি কয়েকটি স্কেচ মিসিং। জানা যায় মিস্টার শর্মার পুরস্কৃত শিল্পগুলির একটি নাকি ওই মহিলারই। পরে ব্যাপারটা জানাজানি হতে নাকি বৃদ্ধা স্বাভাবিক ভাবেই শক পান এবং এরকমও বলা হচ্ছে যে শর্মা বাবু মহিলার মুখবন্ধ রাখতে বৃদ্ধাকে টাকাও অফার করেন কিন্তু বৃদ্ধা শক সামলাতে না পাড়ায় ইহলোক ত্যাগ করেন।”
— “বেশ!”
সৌহার্দ্রর এই ‘বেশ’ কথাটা শ্রেয়ানের কথার উত্তর কিনা সেটা শ্রেয়ান ঠিক বুঝে উঠতে পারে না , কারণ তাঁর চোখ এখন দেয়ালে টাঙানো একটা বিশেষ ছবির দিকে।
— “এবার আসি দ্বিতীয় জনের ব্যাপারে। নাম অনুপ ভৌমিক। বলতে গেলে এই কদিনে বেশ নামডাক হয়েছে গাইয়ে হিসেবে, নতুন সিনেমা এলে কমপক্ষে ওনার একটা গান তো থাকবেই… তবে হ্যাঁ তাঁর ব্যাপারটাও বেশ গুরুতর বলেই মনে হয়, মানে আরকি, যা জেনেছি তাই যদি সত্যি হয় তবে, ওর যে তিনখানা অ্যালবাম তার প্রত্যেকটাই বাজারে ব্যাপক হিট , ব্যক্তিগত ভাবে আমারও বেশ লাগে ওঁর গান। অবিশ্যি একটা খটকার জায়গা ছিল, আর সেটা আমারো মনে হতো……., সেটা হলো যে মিস্টার ভৌমিক কখনই টিভি বা রেডিও তে আসতে চাইতেন না, এখন অনেকে সন্দেহ করছেন যে তিনি নাকি গান ই গাইতেন না….!”
–“তাঁর কোনো এক পিসতুতো ভাই নাকি তাঁর হয়ে গলা দিতেন!”
— “বাবা! তুমিও তো ভালোই হোমওয়ার্ক করে এসেছো দেখছি!”
সৌহার্দ্র একটা তাচ্ছিল্যব্যাঞ্জক হাসি হাসলো। হাওয়ার গতিবেগ এবার ধীরে ধীরে ঝড়ের আকার নিচ্ছে। চাপা ফিসফিসানি যেন বীভৎস ভাবেই প্রকট।
— “পরে রইলো তৃতীয় ব্যক্তির কথা। নাম রাজীব সেন, যাকে আজ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ঢাকুরিয়ার ফ্ল্যাট এ। বর্তমানে যে খবর সমগ্র ক্রিকেট মহলে সারা ফেলেছে, সেটা হলো বাংলার দলে গড়াপেটার জেরে গ্রেফতার হন রণবিজয় সিনহা, যদিও তিনি সমস্তকিছুকেই অস্বীকার করেছেন, তবে সেটা তো আগে থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছিল যে তিনি নির্দোষ এবং আসল মাগুর মাছ নাকি রাজীব সেন, তো যাই হোক, তোমার এতকিছু শুনে কি মনে হলো?”
— “হাহাহাহা……. কৃতী ব্যাক্তিত্ব যখন হয় কালিমালিপ্ত তখন তা প্রকাশ্যে আসার অপেক্ষা……এলেই জব্দ…….!”
— “উফফ তোমার বাংলা ভাষা নিয়ে যে আর কি বলি…… ”
— “মুখোশ পরা আসল মানুষ যেখানে হেসে চলেছে….., বিবেক সেখানে স্তব্ধ। যাই হোক, আমার একটা প্রশ্ন আছে।”
— “কি?”
— “এগুলো যদি একেবারেই গোপন থাকতো তাহলে এখন হঠাৎ তোমার বন্ধু মহলে জানাজানি হলো কি করে?”
— “না……. আসলে তাঁদের অনেকের সাথেই পুলিশমহলের ভালো সম্পর্ক, এগুলো সবই তদন্তে উঠে আসা তথ্য আবার কিছুটা অনুমানও বলা যেতে পারে, কিন্ত তুমিও তো মনে হয় জানো দেখছি, অনুপ ভৌমিক এর ব্যাপারটা…”
— “আচ্ছা এটা তো তোমার তোলা তাই না?”
ছবিটার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বললেন সৌহার্দ্র, সেই ছবিটা…..যেটা এতক্ষন ধরে নিরীক্ষণ করে চলেছেন তিনি।
— “আফ্রিকা……., ২০১২ তে…… সেই যখন ধীমানের সাথে গেছিলাম!”
শ্রেয়ানের গর্বের সাথেই বলে ওঠে।
ছবিতে দেখা যায় একটি চিতা তার শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। শিকারটি হলো একটি বাচ্চা ছেলে। দুটো পা মুড়ে মাথা গুঁজে বসে আছে সে। শরীর অতীব রুক্ষ, রোগা নড়াচড়া করবার ক্ষমতাও সে হারিয়ে ফেলেছে। ছবিতে স্পষ্ট ভাসমান চিতার হিংস্র চোখে খিদের আগুন দগ দগ করে জ্বলছে, সারা শরীরের মাংসপেশি যেন সজাগ, বেচারি ছেলেটা জানেও না পরমুহূর্তেই মৃত্যু তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
— “খিদের কত রকমের রূপ দেখতে পায় সৌহার্দ্র, খিদে কোথাও রুগ্ন, শীর্ণ, আবার কোথাও বা আসন্ন বিপদ, আহা…….অপূর্ব!”
মুগ্ধ কণ্ঠে বলে উঠলেন সৌহার্দ্র।
— “এমন এক শিহরণ জাগানো মুহূর্ত সহজে ক্যাপচার করা যায় না বন্ধু, মুঝে তো লাগতা হ্যায় কি ইয়ে মউকা নাসিববালো কোহি মিলতা হ্যায়…….”
— “আশেপাশে আবার হায়না-টায়না ছিল নাকি?”
“সেটা তো ঠিক………, না মনে হয়।”
— “হায়নাদের নিয়ে একটা গুজব আছে, তারা হলো বাঘেদের ধামা ধরা, ভীতু! বাঘেদের খেয়ে যাওয়া প্রসাদ ভক্ষনেই তারা তুষ্ট, ওই সেই মারকোনক্সদের মতোন। যদিও আসলে এগুলো সবটাই ভুল। তবে আজ যেন গুজবটা হঠাৎ সত্যি বলে মনে হচ্ছে!”
–“আমি কিন্তু হায়না লক্ষ্য করিনি, প্রথমে দেখি ছেলেটিকে……..তার খানিক পরেই আসে ওই হিংস্র চিতা।”
— “একটু জল হলেই বোধহয় ছেলেটা বেঁচে যেত।”
শ্রেয়ান এবারে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেও কথাটা ভালো লাগেনি তাঁর।
— “ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, রুগ্ন বাচ্চা ছেলেটিকে সামান্য সাহায্য করলেই হয়তো সে প্রাণে বেঁচে যেত, কিন্তু আমার বন্ধুবর তো শুধু দেখেই গেলেন। আমার বন্ধুবর তখন তো আবার…….বাঘের শিকারের অপূর্ব রাজকীয় চলনে মুগ্ধ, ভগবানের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হয়েও যাঁর কার্যকলাপ হায়নার চেয়েও নিকৃষ্ট! আর কিছুই বলার নেই…….। ”
সৌহার্দ্রর চোখ কেমন যেন আধবোজা লাগছে।
— “এসব কথার মানে কি সৌহার্দ্র…. ?”
বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন শ্রেয়ান।
আবার কোথাও যেন কাঁচ ভাঙার একটা শব্দ পাওয়া গেলো।
— “আফ্রিকা থেকে ফিরে আসার পর তোমার ইচ্ছা ছিল ছবিটি সর্বসমক্ষে নিয়ে আসা, তবে বাধ সাধে তোমার ওই সেই জার্নালিজমের বন্ধু মহল। সেখান থেকে নিঃসন্দেহে তোমার একটু হলেও অপরাধ বোধ জন্মায়, যদিও তুমি নিজেও জানতে যে এ জিনিস মানুষের কাছে পৌঁছলে তোমার কৃতিত্ব বেশ খানিকটা কালিমালিপ্ত হতে পারে। তবে আমার এই বন্ধুটির অপরাধ বোধের থেকে অহংবোধ বরাবরের থেকেই বেশি বলেই, ছবিটি বাইরে না এলেও তাঁর দেয়ালে আজও দৃশ্যমান!”
সৌহার্দ্র এখন প্রত্যেকটাকে ধরে ধরে বলেই চলেছে।
শ্রেয়ানের ঠোঁট নড়লেও গলা শুকিয়ে যাওয়ায় গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোচ্ছে না।
সৌহার্দ্র আধবোজা চোখ আর মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে আসতে আসতে ক্রমাগত এগিয়ে আসছে শ্রেয়ানের দিকে। শিকারের ঠিক আগের মুহূর্তে শিকারির চলন তাঁর ভালোভাবেই রপ্ত। তবে তার চলন যেন আরো ভয়ানক আরো নিশ্চিত। যেন সে ঠিক শ্রেয়ানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে পরমুহূর্তেই।
— “”সেরা পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত, বাঙালির গর্ব শ্রেয়ান গোস্বামী, যিনি তাঁর গর্বের বশবর্তী হয়ে একটি দরিদ্র, রুগ্ন, শীর্ণকায়, অসহায় বাচ্চা ছেলেটিকে অসম্ভব বিপদের হাত থেকে বাঁচাবার সুযোগ পেয়েও বাঁঁচাননি”, এটা খবরের হেডলাইন হিসেবে কেমন চলবে বলোতো…? এই লেখার মান খুব একটা উঁচু না হলেও তুমি তোমার বিশ্বমানের পুরস্কার হারাতেই পারো নিঃসন্দেহে, ঠিক যে আশংকায় বাকিরা……..হাহা…..”
— “তুমি কি উদ্দেশ্যে এখানে এসেছো আমাকে প্লিজ বলবে? কি চাও তুমি…….আমি ভালোই বুঝছি যে…….”
— “আজকে সারা শহর, সারা দেশ, সারা বিশ্ব একটা ভয়াবহ ভাইরাসের দাপটে আক্রান্ত…., না শুধু আজ নয়….., বহু বছর ধরেই…….., আর সেই ভাইরাস হলো বিবেকহীনতা, ছড়িয়ে পড়ছে……, কিন্ত সেই ভাইরাস নির্মূল হয় কিসে বলোতো…..? মুক্তি!”
সৌহার্দ্র এবারে পকেট থেকে একটা কৌটো বার করলো, স্যানিটাইজারের নয়, ঘুমের ওষুধের…..।
— “মুক্তি…….? ওরে……..তোরা মুক্তি কোথায় পাবি? মুক্তি কোথায় আছে……?”
সৌহার্দ্র এবারে কৌটোটা সেন্টার টেবিলে রাখলো।
— “শুভ জন্মদিন শ্রেয়ান, আমার আর বেশিক্ষন থাকা চলে না, ভাইরাস নিধন বড়ো কঠিন কর্মযজ্ঞ বন্ধু…..! হাহা……. আজ তবে চলি।”
সৌহার্দ্র আস্তে আস্তে পা ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।
” ফিরবার পথ নাহি……. দূর হতে যদি দেখো চাহি…… পারিবেনা চিনিতে আমায়……
হে বন্ধু…… হাহাহাহা…… ”
এই মুহূর্তের সবথেকে বড়ো খবর…….রাজীব সেনের মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় বিখ্যাত পুলিৎজার প্রাপ্ত শ্রেয়ান গোস্বামীকে তার বাসভবনে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, ৯৮ টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে তিনি আত্মঘাতী হন বলে খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট সৌহার্দ্র সেনগুপ্ত যিনি এর আগে নাকি অরণ্য শর্মা, অনুপ ভৌমিক আর রাজীব সেনের মানসিক চিকিৎসা করেছেন।
— “মিস্টার সেনগুপ্ত আপনি আমাদের কয়েকটি…….”
_____________________________________________________________________________
To get technology related quality blogs please visit our main website