আমাদের পাড়ার সকলেই অনন্ত দাদুকে খুব শ্রদ্ধা করে। আমাদের সকলের প্রিয় অনন্ত দাদু এক কথায় পাড়ার এক জীবন্ত জীবাশ্ম। ওনার সমবয়সী কেউ বেঁচে না থাকলেও আমাদের মত যুবক ছেলেদের সাথেই গল্পগুজব করতেন, খাওয়াতেন।
ওনার দুই ছেলে। দুজনেই কর্মসূত্রে বাইরে কাটান। দুজনেই বিবাহিত এবং সেক্ষেত্রে সংসার ধর্মেও ব্যস্ত। বড়ো ছেলে প্রায়ই আসেন বাবার খোঁজ নিতে কিন্তু ছোট ছেলে অনেক দূরে থাকায় খুব একটা বেশি আসেন না। তাই দাদু অসুস্থ হলে আমাদেরই খোঁজ নিতে হয় বেশি। তার বিনিময়ে দাদু সুস্থ হলে পেনশনের টাকায় পিকনিকও হয়। তাই আমাদের বিরক্ত হওয়ার কোনো কারণই নেই।
কিন্তু অত্যধিক বয়সের ভারে দাদু আরো অসুস্থ হচ্ছিলেন কয়েকদিন ধরে। হটাৎ আজ সকালে দাদুর বাড়ির কাজের ছেলেটার চিৎকারে আমরা গিয়ে দেখি দাদু জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে আছেন। তৎক্ষনাৎ আমরা দাদুকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে তাঁর ছেলেদের খবর দিলাম।
বড়ো ছেলে, অনিলদা খবর পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা বাদেই চলে আসলেন। ছোটো ছেলে, অনিসদা এখনও আসেননি।
কিছু পরে ডাক্তার এসে বললেন, দাদুকে অন্য ভালো হাসপাতালে ভর্তি করতে। তখনই অনিলদার মাথায় বাজ পড়ল। অনেক ভাবার পর স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন, “আপাতত বাবাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখি। ছোটভাই আসলে একসাথে পরামর্শ করব।”
আমরা কয়েকজন বেকার ছেলে শুধু নীরব দর্শক হয়ে দেখছিলাম সব।
আরও কয়েক ঘণ্টা বাদে অনিষদা আসলেন বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে। এসেই বাবার খবর জানতে চাইলেন। কিন্তু অন্য কোথাও ভর্তির কথা শুনলে চিন্তিত হয়ে পারলেন।
অনিষদা বললেন, “এখন অন্য কোথাও ভর্তি করা মানে অনেক টাকার খরচ ভালো হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ঢোকাতে। কিন্তু আমার ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আছে, এই মুহূর্তে ত আমি টাকা দিতে পারব না।”
অনীলদা বললেন, ” দেখ ছোট তুই আমার থেকেও বেশি মাইনে পাস। তাছাড়াও আমারও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ আছে। এই মুহূর্তে আমিও বেশি দিতে পারব না।”
এই কঠিন পরিস্থিতিতে এদের দুজনের তর্ক দেখে আমরাই অবাক হলাম। সময় পার হচ্ছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়া আর হচ্ছিল না।
অবশেষে দুজনের সিদ্ধান্তে একটা ভালো হাসপাতালে ভর্তি করা হলো দাদুকে। কিন্তু ততক্ষণে দাদু আর সহ্য করতে পারলেন না। মারা গেলেন চিকিৎসারত অবস্থায়।
বাড়িতে নিয়ে আসা হল তাঁকে। এরপর দুই ভাই মিলে আবার সিদ্ধান্ত নিতে বসলেন, কে কত টাকা খরচ করবেন বাবার শ্রাদ্ধে এই ব্যাপারে।
অনিষদা বললেন,”দাদা আমি তো বাবার ঠিক মত খোঁজ নিতে পারি না। বাবার দায়িত্ত্ব তো পালনই করতে পারলাম না। আমি বাবার শ্রাদ্ধতে নিজে টাকা খরচ করে কর্তব্য পালন করতে চাই।
অনীলদা বললেন,” না না তোর ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ আছে তোকে অত দায়িত্ত্ব নিতে হবে না। আর আমি বড়ো ছেলে হতে বাবার শ্রাদ্ধে খরচ করব না এটা তো হতে পারে না।”
এদের দুজনের ঝগড়া দেখে আমরাও বুঝতে পারলাম দুজন কতো বড় কর্তব্যপরায়ণ।
কঠিন বাস্তব😔😔😔…..golpo ta darun
😊 khub sundor short story… keep it up …
Hmmm wah khub vlo